বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে
সম্মানিত পাঠক, আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর রহমতে আপনারা সকলেই ভালোই আছেন। আমরা হয়তো অনেকেই জানি বাংলাদেশে প্রতিবছর সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। আপনি কি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে হলে আপনার কি কি যোগ্যতা লাগবে সেই সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে একেবারে সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। অনেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে চায় কিন্তু সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে সেই বিষয় ধারণা নাই।
মূলত আজকের পোষ্টে তাদের কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সাজানোর চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে হলে আপনার কি কি যোগ্যতা লাগবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে কিছুক্ষণ সময় অপচয় করে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
সাধারণত সেনাবাহিনীর চাকরি সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বিচারে বেশি চাহিদা মূলক। তবে আমাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে চাকরি পেতে হলে কিছু যোগ্যতা দরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সর্ববৃহৎ শাখা। এই বাহিনীটি গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। আর এই বাহিনীটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নামে পরিচিত পেয়েছে।
বর্তমানে সেনাবাহিনীতে প্রায় ৩ লাখেরও অধিক সদস্য রয়েছে। এই বাহিনীর প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডসমূহ রক্ষাসহ সকল প্রকারের নিরাপত্তা ও জনবল সরবরাহ করা। মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন পত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলে দেওয়া হয়।
মূলত এই কারণেই আমরা আজকের এই আর্টকেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে হলে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন এই বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে কত ফুট উচ্চতা লাগে, সেনাবাহিনীতে বয়স কত লাগে, সেনাবাহিনীতে কি কি কাগজ লাগে, কি কি সমস্যা থাকলে সেনাবাহিনীর চাকরি হয় না ইত্যাদিসহ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আলোচনা করব।
তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। তাহলে আপনি এ বিষয়ে অজানা তথ্যগুলো জানতে সক্ষম হবেন। তো আসুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে হলে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন হয় সেই বিষয়ে সংক্ষেপে জেনে নেব।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে যেসব যোগ্যতা লাগে
সাধারণত সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দিতে হলে এসএসসি বা সমমান পাশ হতে হবে। এই পদে মাত্র ১ দিনের মধ্যেই লিখিত, মৌখিত এবং মেডিকেল পরীক্ষা নেওয়া হয়। যারা এগুলো পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদেরকে যোগ দিতে ডেকে নেওয়া হয়।। আর পরবর্তীতে সফলভাবে ৬ মাস ট্রেনিং সম্পন্ন করতে পারলে সৈনিক হিসেবে চাকরিপ্রাপ্ত হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাধারণত (GD) পদে আবেদন প্রার্থীকে কমপক্ষে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় (GPA-৩.০০) পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নারী প্রার্থীদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এবং সেই প্রার্থীর বয়স ১৭ বছরের কম ও ২০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
অপরদিকে কারিগরি পদে আবেদন প্রার্থীকে এসএসসি ভোকেশনাল থেকে সংশ্লিষ্ট কারিগরি বিষয়ে (GPA-৩.০০) পেয়ে পাশ করতে হবে। এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস হয়ে গেলে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হতে সংশ্লিষ্ট ট্রেড কোর্স ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে ট্রেড কোর্স করা প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবে।
কিন্তু যারা টেকনিক্যাল ট্রেড (TT) এর শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবে। আশা করি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন সেনাবাহিনীতে কত ফুট উচ্চতা লাগে সেটি জেনে নেই।
সেনাবাহিনীতে কত ফুট উচ্চতা লাগে
সেনাবাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে খুব সাধারন একটি প্রশ্ন সেটি হল সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে হলে কত ফুট উচ্চতা লাগে? মূলত উচ্চতার বিষয়টি নারী ও পুরুষ দুজনের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিক উচ্চতা নুন্যতম ৫ ফুট ৬” ইঞ্চি হতে হবে এবং ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি এবং বুকের মাপ হতে হবে ৩০ ইঞ্চি এবং স্ফীত অবস্থার ক্ষেত্রে ৩২ ইঞ্চি হতে হবে।
তবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে উচ্চতা নুন্যতম ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে। মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক উচ্চতা নুন্যতম ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি হতে হবে এবং ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৪৭ কেজি। আর বুকের মাপ কমন অবস্থা ২৮ ইঞ্চি ও স্ফীত অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি। তবে বিভিন্ন ক্ষুদ্র সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ১ ইঞ্চি হতে হবে।
পুরুষ ও নারী উভয়কেই অবশ্যই মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অবিবাহিত এবং সাঁতার জানা থাকতে হবে। আশা করছি সেনাবাহিনীতে নারী ও পুরুষদের ক্ষেত্রে কত ফুট উচ্চতা,ওজন,বুকের মাপ কত হতে হয় তা জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, সেনাবাহিনীতে বয়স কত লাগে তা জেনে নেই।
সেনাবাহিনীতে বয়স কত লাগে
অধিকাংশ মানুষই জানেন না যে সেনাবাহিনীতে চাকরী পেতে হলে নুন্যতম বয়স কত লাগে? সাধারণত সেনাবাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে সাড়ে ১৬-২১ বছর বয়স লাগে। অপরদিকে সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত প্রার্থীদের বয়স ১৮-২৩ বছর পর্যন্ত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু কোন এফিডেফিট (Affidavit) গ্রহণযোগ্য হবে না।
অতএব এই বয়সের মধ্যে আপনারা যারা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ভালো পয়েন্ট (জিপিএ-৩.০০) পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কেবলমাত্র তারাই সেনাবাহিনীতে চাকরীর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আশা করছি সেনাবাহিনীতে বয়স কত লাগে? সেটি জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, সেনাবাহিনীতে কি কি কাগজ লাগে সেটি জেনে নেই।
সেনাবাহিনীতে কি কি কাগজ লাগে
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য যোগদানের সময় আপনার যেসব কাগজপত্র লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
- শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদপত্র কিংবা মার্কশিট
- প্রশংসা পত্র বা প্রবেশপত্র
- অভিভাবকের সম্মতি সূচক সনদপত্র
- নাগরিকত্ব ও চারিত্রিক সনদপত্র
- জাতীয় পরিচয় পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র লাগবে ইত্যাদি।
মূলত উপরোক্ত কাগজপত্রগুলো সেনাবাহিনীতে চাকরির ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষার সময় সাথে করে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। আশা করছি সেনাবাহিনীতে কি কি কাগজ লাগে তা জানতে পেরেছেন। এবার আসুন, সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য কত পয়েন্ট লাগবে? সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
সেনাবাহিনীতে কত পয়েন্ট লাগবে
মূলত সেনাবাহিনীতে (GD) পদে আবেদনের জন্য এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে নুন্যতম (GPA-৩.০০) পেয়ে পাশ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশকৃত মহিলাদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রার্থীর বয়স ১৭ বছরের কম এবং ২০ বছরের বেশি হওয়া যাবে না।
সেনাবাহিনীতে কি কি সমস্যা থাকলে চাকরি হয় না
আপনার যদি শারীরিকভাবে কোন ধরনের অক্ষমতা বা সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত হতে পারবেন না। যেমন আপনি যখন সেনাবাহিনীর পরিক্ষাভাবে লম্বা লাইনে দাঁড়াবেন তখন আপনাকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পরে আপনার যদি দুই হাতের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাঁকা না থাকে তাহলে আপনাকে বাতিল হিসেবে গন্য করা হবে।
আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় উচ্চতা, বুকের মাপ ও অন্যান্য দিকগুলো সঠিক থাকলেও চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে তাকে বাতিল ঘোষনা করা হবে। আবার আপনার যদি উচ্চতা ঠিক থাকে কিন্ত ওজন তুলনামূলক কম থাকার কারণেও বাতিল হিসেবে গন্য করা হবে। এছাড়াওঃ
- ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের শরীরের কোন কাটা দাগ লক্ষ্য করা হলে
- যদি একটা বড় ধরনের এক্সিডেন্ট থাকলে
- শরীরে কোন ধরনের কাটার দাগ থাকে
- মেডিকেল ডাক্তার যদি আপনাকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করলে
- নাকের পলিপাস হয়ে থাকলেও আপনাকে বাদ দেয়া হবে।
সেনাবাহিনীতে কত বছর বয়স হলে চাকরি করা যায়
এবার আমরা জানবো সেনাবাহিনীতে কত বছর বয়স হলে চাকরি করা যায় সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের চাকরির জন্য বর্তমানে নির্দিষ্ট চাকরির বয়স বা মেয়াদসীমা রয়েছে যেমন-
- (GD) পদের মেয়াদসীমা ২১ বছর
- ল্যান্স পদের মেয়াদসীমা ২২ বছর
- করপোরালদের মেয়াদসীমা ২৩ বছর
- সার্জেন্টেদের মেয়াদসীমা ২৪ বছর
- ওয়ারেন্ট অফিসারদের মেয়াদসীমা ২৭ বছর
- সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারদের মেয়াদসীমা ২৯ বছর
- মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসারদের মেয়াদসীমা ৩৩ বছর ইত্যাদি।
- সাধারণত উপরের উল্লিখিত বয়সসীমা অনুযায়ি সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যায়।
সেনাবাহিনী চাকরির বেতন ও সুযোগ সুবিধা
চূড়ান্তভাবে সৈনিক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বেশ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। যেমন নির্ধারিত স্কেলে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ বিনা মূল্যে প্রতি মাসে খাবার সামগ্রী, এমনকি বাসস্থান এর সুবিধা পাবেন। এছাড়াও আপনার মা-বাবা ও শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসা।
আবার বিনা মূল্যে সরকারি পোশাকসহ ভর্তুকি মূল্যে রেশন পাবেন যেগুলো সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। তাছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনার সন্তানদের উচ্চশিক্ষার তো সুযোগ রয়েছে। মূলত একজন সৈনিকের সাধারণ স্কেলে বেতন ৯৫০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২১,৫০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
লেখকের শেষকথা
আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক হতে কি কি যোগ্যতা লাগে ও সেনাবাহিনীতে সৈনিক সম্পর্কে আরও প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা এ বিষয়ে অবগত হতে পেরেছেন। সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে হলে উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর বেশ নজর দিতে হবে।
তারপরও যদি এই সম্পর্কে আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত কিংবা কোন অংশ বুঝতে না পারেন তাহলে অবশ্যই সেটা আমাদের পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url