বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর | অনার্স প্রথম বর্ষ আপডেট তথ্য

আজকে আমরা বাঙালি সংকর জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিব। বিশেষ করে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জেনে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও বিসিএস পরীক্ষাতেও এই প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে। আপনি হয়তো বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর সম্পর্কে ইন্টারনেটে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম খোঁজাখুঁজি করছেন কিন্তু  সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। তাহলে সঠিক তথ্য পেতে সঠিক  স্থানেই এসেছেন। মূলত এজন্যই আজকের এই পোষ্টে কাঙ্ক্ষিত সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর | অনার্স প্রথম বর্ষ আপডেট তথ্য

আপনি যদি মাত্র ৫ টা মিনিট সময় অপচয় করে আমাদের এই পোষ্টের শেষ অবদি থাকেন, তাহলে বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর এই বিষয়ে জেনে নেওয়ার পাশাপাশি সংকর জাতি কাকে বলে, বাঙালি সংকর জাতি বলা হয় কেন এসব কিছু নিয়ে বিস্তারিত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। তাই অবহেলা না করে সম্পূর্ণ পোস্টটি একেবারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। আশা করছি আমরা এই বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রদান করব যার মাধ্যমে আপনি উপকৃত হতে পারবেন।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ

ভুমিকা

মূলত ছোট পরিসরে বাঙালি জাতির পরিস্কার পরিচয় দেওয়াটা প্রায় অসম্ভব। তবে বাঙালি সংকর জাতি কারন হিসেবে বহুকাল থেকেই এই বাঙালি জাতি বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রণে সংগঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা-উপশিরার মধ্যে আজও প্রবাহিত হচ্ছে। একজন অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর জন্য কিংবা বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে বাঙালি সংকর জাতি এই সম্পর্কে জেনে নেওয়াটা খুবই জরুরী।

কেননা বিভিন্ন পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি আসে। এছাড়াও সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে তো কোন ক্ষতি নেই। আপনি চাইলে সাধারণ জ্ঞান অর্জন হিসেবে এ বিষয়টি জেনে রাখতে পারেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল টপিকে আলোচনা শুরু করা যাক। আমরা প্রথমে সংকর জাতি কাকে বলে? সেই বিষয়ে সংক্ষেপে জেনে নেব।

সংকর জাতি কাকে বলে

সংকর জাতি মূলত দুটি ভিন্ন প্রজাতি, জাত, গণ, বা ভিন্ন পরিবারের জীবের প্রজননের ফলে উদ্ভাবিত জীব। বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, দুটি আলাদা প্রজাতির মাঝে আন্তঃপ্রজননের ফলে উদ্ভাবিত নতুন প্রজন্মকে উক্ত দুই প্রজাতির সংকর বলে।

সাধারনত সংকর করার প্রক্রিয়াটিকে একইভাবে সংকরায়ন হিসেবেও বলা হয়। সংকর জীব তাদের নিজেদের গুণাবলির অধিকারী হিসেবে নিযুক্ত হয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে বা অনেক সময় দেখা যায় সংকরটি তার পিতামাতা থেকে ভিন্ন এবং উন্নত বৈশিষ্ট্য‌মূলক-ও দেখাতে পারে।

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে: ২টি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পরাগরেণু সংযোগের ফলে উদ্ভাবিত নির্দিষ্ট বীজ হতে যে জীব জন্ম নেয় সেটিই সংকর জাত হিসেবে রচিত। উদ্ভিদের সংকর জাত কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য তৈরি হয়। এমনকি  উদ্ভিদে সংকর জাত হিসেবে পিতা-মাতার উভয়ের জাতের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকতে পারে।

প্রাণীর ক্ষেত্রে: ২টি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে মিলনের ফলে যে জীব জন্মগ্রহণ করে  তাকে প্রাণী ক্ষেত্রে শংকর জাত বলা হয়। মূলত প্রাণীর সংকর জাত বিরল প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণ করার জন্য কিংবা পোশাক প্রাণী গুলোর নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তৈরি করা হয়।

আশা করছি সংকর জাতি কাকে বলে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। এবার চলুন, বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয় কেন? সেই সম্পর্কে জেনে নেই।

বাঙালি সংকর জাতি বলা হয় কেন

বিভিন্ন স্থান থেকে নানান ধরণের জাতের লোকেরা একই স্থানে সংমিশ্রণ হয়ে গোটা জাতি গঠন করেছে। এজন্য একে বাঙালির সংকর জাতি বলা হয়ে থাকে। অতেব বৈচিত্র্যময় এই পরিবেশের মাঝে বসবাস করে আসছে এমন মানুষ আলাদা আলাদা জায়গা থেকে এসে এক জায়গায় ভিড় জমিয়েছে এবং সেখানে একটি জাতি গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছে।

মূলত বাঙালি মিশ্র জাতি হিসেবে বহুকাল ধরেই এই বাঙালি জাতি নানা জাতির সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা উপশিরাই আজও প্রবাহিত। এটিই বাঙালিকে সংকর জাতি বলার মূল কারন। নৃতাত্ত্বিকরা একমত হয়েছে যে আমাদের বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন জাতির সংমিশ্রনে দেশটি গঠিত হয়েছে।

তবে আগমনের অনেক আগে থেকেই খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আর্যরা পূর্বেই বাঙালির সাথে জাতিগতভাবে মিশ্রিত ছিল। মানুষের উৎপত্তিস্থল প্রথমে আফ্রিকা উপমহাদেশে ছিল, কিন্তু কিছু তারা প্রথমে উত্তরাঞ্চলে চলে যায় এরপর মধ্যপ্রাচ্য তারপর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তার প্রভাবটা এই উপমহাদেশেও লক্ষ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের জনগোষ্ঠী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই অঞ্চলে বসবাসরত অবস্থায় থেকে। বিভিন্ন জাতির রক্ত বাঙালি জাতির শিরা উপশিরার মধ্যে আজও প্রবাহিত রয়েছে। মূলত এজন্যই বাঙালিকে সংকর জাতি বলা হয়।

বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর

বাঙালি এককভাবে কোনাে নৃতাত্ত্বিক জনগােষ্ঠী নহে। সেই প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন গােষ্ঠীর সমন্বয়ের মাধ্যম ওমিশ্রণ-বিরােধের সাথে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। স্যার হার্বার্ট রিজলি, রমাপ্রসাদ চন্দ্র প্রমুখপণ্ডিত বিরজাশঙ্কর গুহ ভারতীয় উপমহাদেশের জাতিগত পরিচয় নির্ধারণে যারা নিরলসভাবে কাজ করেছেন। পণ্ডিতদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত হচ্ছে বাঙালি শুধুমাত্র নতুন মিশ্র জাতি।

ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশে প্রথম যে জনগােষ্ঠী বসবাস শুরু করেছিল তারা মূলত অস্ট্রালয়েড বা নিগ্রোয়েড শ্রেণির অন্তর্গত হিসেবে রচিত। তবে ধীরে ধীরে এদের সঙ্গে এক পর্যায়ে যুক্ত হয়েছে দ্রাবিড়, মঙ্গোলয়েড, আর্য, আলপিয়ান, নার্ডিক, আরব জাতি ইত্যাদি। আর্যরা ৫ম শতকের আগেই বাংলায় আসে। এজন্যই নানানরকম জাতির সমন্বয়ে এই বাঙালি জাতি গঠিত। বাংলাদেশের প্রধান জাতিঃ
  • দ্রাবিড়
  • মঙ্গোলয়েড
  • আর্য বা ককেশীয় জনগোষ্ঠী
  • নার্ডিক
  • নেগ্রেটো
  • অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড
  • ইউরোপীয় জাতি
  • আরব জাতি
  • আর্য পরবর্তী ধারা
দ্রাবিড়: সিন্ধু সভ্যতার দ্রাবিড় ভাষা-ভাষী আলপাইন (Alpain) গোত্রের এই নরগোষ্ঠী ভূমধ্যসাগরীয় হয়ে থাকে কেননা এদের মাথা লম্বা, চুল কালাে বাদামি, নাক চওড়া ও উন্নত, মুখ গহ্বর বড়,উচ্চতা খাটো, ঠোট পুরু, গায়ের রং কালাে থেকে বাদামি, মুখাবয়ব তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট হয়ে থাকে।

মঙ্গোলয়েড: প্রায় ৫-৬ হাজার বছর আগে উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে মঙ্গলীয় আগমন ঘটে। এদের গায়ের রং পীতাভ থেকে বাদামি, মাথার আকৃতি গোল, চোখের পাতা সামনের দিকে ঝোলানো। নাক চ্যাপ্টা, চুল কালো ও ঋজু। এ জনগোষ্ঠী মূলত দক্ষিণ-পশ্চিম চীন দেশ থেকে এ অঞ্চলে এসেছে। বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে এদের মূল বসবাস।

আর্য বা ককেশীয় জনগোষ্ঠী: খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে খাইবা নামক একটি গিরিপথ দিয়ে এই আর্য জাতি ভারতবর্ষে এসেছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের দিকে আর্যদের অঞ্চলে আগমন ঘটে বলে ধারনা করা হয়েছিল। আর্যরা দ্রাবিড় পদানত করে ভারতবর্ষে বর্ণপ্রথার হয়ে জন্ম দেয়। শরীরের লম্বাকৃতির মাথা, বলিষ্ঠ গড়ন, সরু নাক, গৌরবর্ণআর্যদের লক্ষণ।

নার্ডিক: নার্ডিক হচ্ছে বাঙালি নৃমিশ্রণ জাতির নাম। তারা মূলত আগে বেদপন্থি আর্য ছিল। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির উদ্ভাবনে এদের অবদান বেশি জটিল। বেদ রচনার পরে এদের উদ্ভাবন হয়। বাংলা, মারাঠা ও গুজরাট এদের অবস্থান ছিল। এরা ভারতে এসে বন্য প্রানী বা পশুদের পোষ মানিয়ে গৃহপালিত জীব হিসেবে পরিচালনা করতো।

নেগ্রেটো: এদের কৃষ্ণবর্ণ, খর্বাকৃতি, ঠোঁট পুরু ও উল্টানো বেঁটে এবং নাক অতি চ্যাপ্টা। এরা বাংলার জনগোষ্ঠীর প্রথম স্তর হিসেবে পরিচিত। ময়মনসিংহ, যশোরের বাঁশঝোড়, সুন্দরবন এবং নিম্নবঙ্গের জনের মধ্যে প্রভাব অনেক বেশি।

অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড: অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালির প্রধান জাতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। এদেরকে মূলত নিশাত জাতীয় বলা হয়। অস্ট্রিক জাতি নেগ্রিটোদের পরাজিত করে প্রায় ৫-৬ হাজার বছর আগে ইন্দোসিনিয়া থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছিল। এদের মাথার গড়ন লম্বা, গায়ের রং মিশমিশে কালাে, নাক চওড়া, বেঁটে কিংবা মধ্যকার। এরা নিষাদ ও ভেডিড নামেও পরিচিত।

ইউরোপীয় জাতি: প্রায় ১৬ শতকের দিকে বাঙালি জাতি গঠনে অবদান রাখতে ইউরোপীয়রা এখানে এসেছিল। এরপর ইংরেজরা বাঙালির নিমিশ্রণে ভূমিকা রাখতে বাংলায় আগমন করে।

আরব জাতি: আরব জাতি ৭ম এবং ৮ম শতাব্দির দিকে বাংলার মাটিতে আগমন করেছিলেন। এরপর পরবর্তীতে আরব জাতীরা বাঙ্গালীদের সাথে মিশে একটি বসতি গড়ে তোলেন।

আর্য পরবর্তী ধারা: আর্য জাতি ছাড়াও পরে আবার আরও নানান জাতি এ অঞ্চলে আগমন করে থাকে। তাদের সংমিশ্রণেও বাঙালি জাতি গঠন করতে সাহায্য করে। পারস্যের তুর্কিস্তান থেকে সারা জাতির লােকেরা ভারত গোষ্টিতে আগমন করেন। এর তারা ভারতে আসার পর ভারতের পূর্বাঞ্চল ও বাংলায় বসতি গড়ে তোলে।

লেখকের শেষকথাঃ বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর

পরিশেষে বলা যায়, বাঙালি জাতির উদ্ভাবন নিয়ে নানান ধরণের মতামত থাকলেও বাঙালি জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে এখনো সঠিকভাবে কোনাে তত্ত্ব পাওয়া সম্ভব হয় নি। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের জনগােষ্ঠীর মধ্যে আচার-অনুষ্ঠান, পরিবারিক জীবনযাত্রা, আর্থসামাজিক ইত্যাদি সবকিছুতেই এক প্রকারের সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

তাই প্রাগৈতিহাসিক কাল হতে দ্রাবিড়, মােঙ্গল, আরব ও তুর্কি,  অস্ট্রিক, আলপীয় জনগােষ্ঠীর সাথে আর্যদের সংমিশ্রণে বাঙালি জাতির উদ্ভাবন হয় ও একটি সংকর জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকে। আমরা ইতিমধ্যে বাঙালি সংকর জাতি ব্যাখ্যা কর সেই বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা এ বিষয়ে অবগত হতে পেরেছেন।

তারপরও যদি এই পোষ্টের কোন অংশ বুঝতে না পারলে কিংবা কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই সেটা আমাদের পোষ্টের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। বাঙালি সংকর জাতি সম্পর্কিত আজকের আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url