দেশি পেয়ারার উপকারিতা - দেশি পিয়ারার ১২ টি উপকারিতা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

 ২০২৫ সালে এসে দেশি পেয়ারা প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। পুরো দেশে ছড়িয়ে গেছে বিদেশি বিভিন্ন জাতের উন্নত পেয়ারা দিয়ে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় দেশি পেয়ারা আমরা দেখতে পাই।
প্রিয় বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলে আমরা দেশি পেয়ারা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী এ বিষয়টা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তো চলুন দেরি না করে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

সূচিপত্রঃ দেশি পিয়ারার ১২ টি উপকারিতা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

দেশি পেয়ারা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা সবাই কম বেশি পেয়ারা খান । কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন না যে পেয়ারায় কি কি উপকরণ থাকে এবং সেগুলো আমাদের শরীরের কি কি  উপকার করে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যায়। 

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীরের যে কোন রোগ হলেই খুব তাড়াতাড়ি রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করে।

দেশি পেয়ারা আমাদের শরীরের হজমের সমস্যা সমাধানে কাজ করে

দেশি পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যে উপাদানটি আমাদের পাকস্থলীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে খুবই কার্যকরী। তাছাড়াও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে। যেহেতু পেয়ারা একটি সহজলভ্য ফল তাই আমরা সকলেই চেষ্টা করব অন্যান্য আজেবাজে খাবার না খেয়ে নিয়মিত একটা বা দুইটা করে পিয়ারা খাবার। যে অভ্যাসটি আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে এবং শরীরের শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে দেশি পেয়ারার ভুমিকা

প্রিয় বন্ধুরা একবার ভাবুন তো বাড়ির পাশের গাছ থেকে পাওয়া পেয়ারা খেয়ে যদি আমাদের হৃদরোগ এর মতো জটিল সমস্যা  সমাধান করা যায় তাহলে কেমন হয়। কথাটা অবাস্তব মনে হলেও সত্য। দেশি পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি - অক্সিডেন্ট। পটাশিয়াম আমাদের শরীরের হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও রক্তচাপ(blood pressure) নিয়ন্ত্রণ করে। 

আরো পড়ুনঃ লং টেইল কী-ওয়ার্ড রিসার্চ -কী-ওয়ার্ড রিসার্চের ৫টি সহজ উপায়

আপনাদের যদি কারো এরকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে নিয়মিত ১ থেকে ২ টি পেয়ারা খান। আর চেষ্টা করবেন বাড়িতে পেয়ারা গাছ লাগানোর জন্য কেননা বাজারের পেয়ারা বিভিন্ন রকম ওষুধ দিয়ে উৎপাদন করা হয় যার ফলশ্রুতিতে পেয়ার ভিতরের পুষ্টি উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কমে যায়।

চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করতে দেশি পেয়ারা

আমাদের কারো যখন চোখের কোন সমস্যা দেখা দেয় তখন আমরা বিভিন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যায়। চোখের সুস্থতা ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু আমরা কখনই খেয়াল করি না যে আমাদের চোখের সমস্যা কেন হয়। আমাদের চোখের মধ্যে অনেকগুলো পার্টস রয়েছে যেগুলোর কোন একটি দুর্বল হয়ে গেলেই আমাদের চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আর চোখের এই পার্সগুলোর সুস্থতা টিকিয়ে রাখতে ভিটামিন এ কাজ করে যা পেয়ারাতে অফুরন্ত রয়েছে। 

এজন্য চোখের সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই নিয়মিত এক থেকে দুইটি বা তার  বেশি পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস করুন এটা আপনার চোখে সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ক্যন্সার এর ঝুকি কমানোর ক্ষমতা রয়েছে দেশি পেয়ারায়

ক্যান্সার বর্তমান সময়ের একটি স্বাভাবিক রোগের মতই হয়ে গেছে। অনেক মানুষের ক্যান্সার হয়ে থাকে। ক্যান্সার অনেক ধরনের রয়েছে তার মধ্যে আপনাদের সকলের পরিচিত প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার এই দুটি ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান কাজ করে লাইকোপিন ও ভিটামিন সি।

যে উপাদানগুলো খুব সহজে বাড়ির পাশে গাছ থেকে নামানো পেয়ারায় পাওয়া যায়। তাছাড়াও যাদের বাসায় পেয়ারা গাছ নাই তারা খুব অল্প দামে বা সস্তায় বাজার থেকে পেয়ারা কিনে খেতে পারবেন। যে পেয়ার ক্যান্সারের  কোষ বৃদ্ধি  প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরের ওজন কমাতে সক্ষম পেয়ারা

শরীরের অতিরিক ওজন কমাতে মানুষ কিনা করে। কিন্তু আমরা জানিই না যে পেয়ারার মধ্যে অতিরিক্ত ওজন কমানোর ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। 

পেয়ারাতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং ফাইবার অত্যাধিক থাকায় পেয়ারা খেলে অনেক বেশি সময় পর্যন্ত আমাদের ক্ষুধা লাগে না। এছাড়াও পেয়ারার মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টোরলের মাত্রা আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে। এগুলোর ফলস্বরুপ আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে শরীল হই স্লিম ও হেলদি।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী পেয়ারা

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। অনেক পুষ্টিকর খাবারও তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় অনেক গর্ভবতী মায়েরা চিন্তায় পড়ে যায় যে কোন খাবারগুলো তার শরীরের এবং তার বাচ্চার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে ।

আর পেয়ারা এমন একটি ফল যার মধ্যে ফলিক এসিড প্রচুর পরিমাণে রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের উপকার তো করেই পাশাপাশি পেটের বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র গঠন ও স্নায়ুতন্ত্রের যাবতীয় সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর। বাচ্চার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।অসুখ বিসুখ কমায়। আশা করি আপনারা গর্ভবতী মায়েদের জন্য পেয়ারা কতটা উপকারী সে সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেছেন। 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে পেয়ারা

বর্তমান সময়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে  দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ মানুষের রক্তের চাপ উচ্চ মাত্রায় থাকে আবার অনেক মানুষের একেবারে লো বা কম থাকে। খুব কম ভাগ্যবান ও স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন মানুষ রয়েছে যাদের রক্তচাপ সঠিক মাথায় থাকে। 

আরো পড়ুনঃ আঙ্গুর ফল মিষ্টি করার উপায়

এ বিষয়ে পেয়ারার গুরুত্ব ও কিন্তু কম নয়। পেয়ারাতে বিদ্যমান থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়াও কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে গোলাপি রঙের পেয়ারার মধ্যে বিদ্যমান থাকা লাইকোপেন কাজ করে। এছাড়াও শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও পেয়ারার ভূমিকা রয়েছে। এক কথায় পেয়ারা একটি সর্বগুণী ফল। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে পেয়ারার ভূমিকা

ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভোগেন বর্তমান সময়ের অনেক মানুষ। গত বছরের একটি নির্দেশিকা থেকে জানা যায় বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখেরও বেশি মানুষ এই কঠিন সমস্যায় ভুগছেন। যা শতাংশ হিসাব করলে হয়  প্রায় 14.2 শতাংশ। আমরা যদি দৈনন্দিন কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে খুব সহজে ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। 

এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো প্রতিদিন পেয়ারা খাওয়ার অভ্যাস করা। আপনারা জেনে অবাক হবেন পেয়ারায় বিদ্যমান থাকে ফাইবার যা আমাদের শরীরের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও পেয়ারার রসে রয়েছে মেলাইটাসের মত ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করার ক্ষমতা। শুধুমাত্র পেয়ারার ফলই নয় পেয়ারার পাতায় রয়েছে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার কার্যকরী ভূমিকা।

ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে পেয়ারা 

ঠান্ডা জনিতো সমস্যায় আমরা বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নিয়ে থাকি যেমন প্যারাসিটামল আমরা ঠাণ্ডা লাগলেই খাই। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায় যদি আমরা ঠান্ডাজনিত সমস্যা চিকিৎসা করতে চাই তাহলে খুব সহজেই পেয়ারার মাধ্যমে এই কাজ চালাতে পারি। পেয়ারার মধ্যে বিদ্যমান থাকে উপাদানগুলো আমাদের ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিস এর মতো  জটিল সমস্যা সমাধান করে ক্ষমতা। 

আপনারা বুঝতে পারছেন যে পেয়ারার উপকারিতা কতটা। আমরা অনেকেই সস্তা এবং অ্যাভেলেবল পাওয়া যায় দেখে হেলায় ফেলে দিই এই সর্বগুণী ফল। আজকের এই আলোচনাটি মনোযোগ দিয়ে যদি আপনারা পড়েন তাহলে আশা করি আর কখনোই পেয়ারা নষ্ট করবেন না। 

দাতের জন্য উপকারি

যখন আমরা পেয়ারা চিবিয়ে চিবিয়ে খাই তখন আমাদের শরীরের উপকারিতার পাশাপাশি দাঁতের বেশ কিছু উপকার হয়। যেমন পেয়ার খাওয়ার সময় আমাদের প্রচুর চিবাতে হয় যা আমাদের দাঁতের এক্সারসাইজ নিশ্চিত করে। এছাড়াও দাঁতের দুর্গন্ধ দূর হয়, দাঁত পরিষ্কার ও ঝকঝকে সাজা হয়, তাছাড়াও দাঁতের ব্যথা এবং দাঁতের অন্যান্য সার্বিক সমস্যার সমাধান হয় পেয়ারা খাওয়ার ফলে।

স্কিন টোনার হিসেবে পেয়ারার ব্যবহার

পেয়ারা হাজার গুণের মধ্যে একটি গুণ হলো পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন মিনারেল ছাড়াও রয়েছে আরো অনেক প্রাকৃতিক উপাদান যার কারণে পেয়ারাকে আমরা স্কিন টোনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। 

এজন্য আমাদের প্রথমে কিছু জলের মধ্যে পেয়ারা অথবা কয়েকটি পেয়ারার পাতা ভালোভাবে সিদ্ধ করে এই পানি সংগ্রহ করবো। উক্ত পানি আমরা পরবর্তীতে মুখে ভালোভাবে প্রয়োগ করলে আমাদের ত্বকের অন্দরে পুষ্টির যে একটা ঘার্তি সেটা পূরণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাছাড়াও অল্প সময় ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে কাজ করে, ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

অল্প খরচে বেশি উপকার পেতে কে না চায় । পেয়ারা বাংলাদেশের একটি সহজলভ্য ফল  হিসেবেই পরিচিত। পেয়ারা সস্তা হওয়ার কারণে অনেকে পেয়ারা কে অবহেলা করে । কিন্তু যারা পেয়ারার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখে তারা কখোনোই পেয়ারাকে অবোহেলা করবে না । 

আরো পড়ুনঃ সিনামিন সিরাপের কাজ কি জেনে নিন

এই আর্টিকেলে আমরা দেশি পিয়ারার ১২ টি উপকারিতা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি । যেগুলো সম্পর্কে জানলে আপনাদের পেয়ারার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যাবে। তো যদি এই আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সাপোর্ট দিয়ে পাশেই থাকুন দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন আর্টিকেলে ততক্ষন পর্যন্ত সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url