চিরতরে চুল পরা বন্ধ হয়ে যাবে এই ১০ টি কাজ করলে

 চুল পরা নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তার মধ্যে থাকি । আর চিন্তা তো হবারই কথা কারণ চুলপরা একবার শুরু হলে তার কোন ব্যবস্থা  যদি না করা হয় তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার মাথায় একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরি হয়ে যাবে।

আজকে আমরা আপনাদেরকে ১০ টি কাজ করার পরামর্শ দিব যে কাজ গুলো করলে চিরতরে আপনার মাথার চুলপরা বন্ধ হয়ে যাবে। এবং চুলের সার্বিক সুস্থতা বজায় থাকবে।

সুচিপত্রঃ চিরতরে চুল পরা বন্ধ হয়ে যাবে এই  ১০ টি কাজ করলে

বাদাম ও নারিকেলের তেলের ব্যবহার করে চুলপরা বন্ধ করুন

বাদাম ও নারিকেলের তেল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী এটা হয়তো অনেকে জানেন। কিন্তু বাদাম ও নারিকেলের তেল ব্যবহার পদ্ধতি এবং কি কি উপকার করে এবং কোন ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। তো চলুন বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক। 

উপকরণ - বাদাম, নারিকেলের তেল 

ব্যবহার পদ্ধতি - এক্ষেত্রে প্রথমে বাদাম ও নারিকেলের তেল ব্লেন্ড করে মিহি করে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপর সারারাত ঠান্ডা করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মাথার চুলে ও ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। 

উপকারিতা - মাথার ফলিকে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর, এছাড়াও কন্ডিশনারের অভাব পূরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং চুলের শিকড়ের শক্তি বাড়ায়। যার ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল হয়ে ওঠে আরও বেশি মজবুত ও ঘন। 

মেথী বীজ ব্যবহার করে চুলপরা বন্ধ করুন

মেথি বীজ আমাদের চুলের জন্য ভীষণ উপকারী সঠিক পদ্ধতিতে যদি আমরা আমাদের চুলে মেথি বীজ প্রয়োগ করতে পারি তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বা খুব তাড়াতাড়ি। আমাদের চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এছাড়াও চুল হবে আরো বেশি মজবুত।  চলুন মেথি বীজ আমাদের চুলে কিভাবে ব্যবহার করব সেই পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

ব্যবহার পদ্ধতি - চুল পড়া বন্ধ করতে মেথি বীজ ব্যবহার করার জন্য প্রথমে আপনাকে আগের দিন রাতে পরিষ্কার পানির ভিতরে মেথি বীজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরের দিন সকালে নারিকেলে তেলের সঙ্গে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঘুম থেকে উঠে আপনি উক্ত মিশ্রণটি ভালোভাবে চুলে এবং মাথায় লাগিয়ে নিন ব্যাস আপনার কাজ শেষ।

আরো পড়ুনঃ ১০,০০০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসায় আইডিয়া

উপকারিতা - মেথি বীজ আমাদের চুল পড়া বন্ধ করে খুব তাড়াতাড়ি। তাছাড়া ও চুল মজবুত ও চুলের  সুস্থতা নিশ্চিত করতে মেথি বীজের ভূমিকা অতুলনীয়। উপরে আমরা যে ব্যবহার পদ্ধতি তুলে ধরেছি আপনারা সকলে চেষ্টা করবেন ওই পদ্ধতি অনুসরণ করে মেথি বীজ চুলে ব্যবহার করার জন্য। 

চুলের যত্নে নিম ও তুলশী পাতা ব্যবহার পদ্ধতি

নিম ও তুলসী পাতা একসঙ্গে করে একটি হারবাল তেল  তৈরি করা যায়। যেই তেল আমাদের চুলের জন্য অনেক উপকারী একটি উপাদান। নিম ও তুলসী পাতার এই হারবাল তেলে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান বিদ্যমান থাকে। চলুন নিচে বিস্তারিতভাবে বিষয় টি উপস্থাপন করা যাক।

চুলের যত্নে যদি আপনারা নিম ও তুলসী পাতা ব্যবহার করতে চান তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন  - প্রথমে কিছু তাজা তুলসী পাতা ও নিমপাতার সঙ্গে মেথি বীজ ভালোভাবে মিহি করে পিষে নিন। তারপর সেই মিশ্রণটি পরিষ্কার নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গরম করবেন। তারপর সাধারণ তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে একটি পাত্রে সংরক্ষণ করে প্রয়োজন অনুসারে সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে তুলসী পাতা ও নিম এবং মেথি বীজ ব্যবহারে আপনার চুল পড়া তো বন্ধ হবে হবেই এর সঙ্গে চুলের খুশকি এবং চুলকানি জাতীয় সমস্যা ও দূর হয়ে যাবে। 

চুল পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে চুলের কি কি উপকার হয়

হাদিসে বর্ণিত আছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ।  এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আমাদের বাঁচাতে পারে হাজার হাজার রোগ থেকে। এমন অনেক রোগ রয়েছে যেগুলো নোংরা পরিবেশে থাকার ফলে আমাদের হয়ে থাকে। চুল ঝরে পড়াও তার ব্যাতিক্রম নয়। 

মাথার চুল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে যে যে উপকার হয় তা এক নজরে দেখে নিন  মাথার ত্বক ভালো থাকে, চুল ফুরফুরে থাকে, চুল পড়া কমে যায়, মন উৎফুল্ল থাকে এছাড়াও মাথার সংক্রমণ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি।

চুল পরা কমাতে পেয়াজের রস

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে পেঁয়াজের রস আমাদের চুল পড়া কমাতে কতোটা কার্যকর। পেঁয়াজের রস সঠিক পদ্ধতিতে চুলে ব্যবহারের ফলে চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত ও দ্রুত হয় তাছারাও চুল ফাটা রোধ করে, চুল ঝরে পড়া প্রতিরোধ করে,এছাড়াও চুলের PH লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজের ভূমিকা অপরিসীম। 

আরো পড়ুনঃ সিনামিন সিরাপের কাজ কি জেনে নিন

পেঁয়াজ আমাদের চুলে ব্যবহার করার সময় এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করতে পারেন - প্রথমে পিয়াজ ও কারি পাতা একসঙ্গে নিয়ে ভালোভাবে পিসে পরিষ্কার নারিকেলের তেলের সঙ্গে মিক্স করে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। তারপর তৈরিকৃত তেল সারা রাত ঠান্ডা করে ছ্যাকনি দিয়ে ছেকে একটি কাঁচের  পাত্রে সংরক্ষণ করুন। পরিমাণ মতো নিয়মিত উক্ত তেলটি মাথায় ব্যবহার করুন। আপনার চুল পড়া কমে যাবে ইনশাল্লাহ। 

চুল পরা চিরতরে বন্ধ করতে কালো জিরার তেল 

কালো জিরার তেলের সবথেকে ভালো যে বিষয় সেটি হল কালো জিরার তেলে বিদ্যমান প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য যেটা আমাদের মাথার ত্বককে সর্বাবস্থায় পরিষ্কার রাখতে এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে কাজ করে। 
ব্যবহার পদ্ধতি- একটি পাত্রে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল নিয়ে তার মধ্যে এক টেবিল চামচ পরিমাণ কালো জিরা ব্লেন্ড করে একবারে গুরো করে মিশিয়ে নিন। চাইলে আপনারা নারিকেলের তেলের বদলে অলিভ অয়েল ও ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ দিন শুকনো জায়গায়  সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে তৈরি হয়ে যাবে কালো জিরার তেল। যা আপনার মাথার জন্য কতটা উপকারী আপনি নিজেও জানেন না। কালো জিরার তেল নিয়মিত মাথায় ব্যবহারে মাথার ত্বক সুস্থ থাকে, চুল ফাটা রোধ করে, খুশকি কমায়, চুল দ্রুত বড় হয়, চুল হয় সিল্কি এবং আরও বেশি ঘন ও মজবুত।

চুলের যত্নে ডিম ও টক দই এর ব্যবহার

চুলের যত্নে ডিমের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি শুনেছি। আসলেই কি ডিমের মধ্যকার উপাদান আমাদের চুলের উপকার করে। এ বিষয় নিয়ে এই ধাপে আমরা আলোচনা করব। 

ডিমের মধ্যে বিদ্যমান থাকে প্রোটিন ও বায়োটিন। যে উপাদানগুলো আমাদের চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুল পড়া বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে, এবং খুশকি প্রতিরোধ করে। এছাড়াও চুলের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে ডিমের মধ্যে থাকার প্রোটিন ও বায়োটিনি ভীষণ কার্যকর। 

আরো পড়ুনঃ লং টেইল কী-ওয়ার্ড রিসার্চ -কী-ওয়ার্ড রিসার্চের ৫টি সহজ উপায়

ব্যবহার পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে গেলে - প্রথমে ডিম এর সঙ্গে কিছু পরিমাণ টক দই ও পরিমাণমতো অলিভ অয়েল বা নারিকেল এর তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর উক্ত পেস্ট চুলে ভালোভাবে মেখে আধা-ঘন্টা অপেক্ষা করে তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।

চুলের জত্নে ভিটামিন ই ক্যাপসুল

ভিটামিন ই ক্যাপসুল আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। বিভিন্ন দিক দিয়ে ভিটামিন ই ক্যাপসুল আমাদের চুলকে সুন্দর করে তোলে যেমন চুল পড়া কমায়, মাথার ত্বকে সুস্থতা বজায় রাখে, খুশকি কমায়, চুলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এছাড়াও চুলের সার্বিক উপকারিতা নিশ্চিত করতে  ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভীষণ কার্যকারী। নিচে এর ব্যবহার পদ্ধতি এবং এতে কি কি উপাদান রয়েছে সে সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত জানা যাক।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল এর ব্যবহার পদ্ধতি খুবই সহজ। ক্যাপসুলটি প্যাকেট থেকে বের করে হালকা ছিদ্র করে সরাসরি মাথার চুলে ভালোভাবে মাসাজ  করুন। এবং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস আপনার ভিটামিন ই ক্যাপসুল প্রয়োগ পদ্ধতি সম্পন্ন। 

চুলের যত্নে আমলকী এর ব্যবহার

আমলকিতে লক্ষ্য করা যায় ভিটামিন সি ও এন্ড্রক্সিডেন্টের কোন অভাব নেই। যে উপাদানগুলো আমাদের চুলের অনেক উপকার করে যেমন - চুল পড়া কমায়, চুলের ফলিক উপাদান আরো বেশি  মজবুত করে, এছাড়াও নতুন নতুন চুল গজাতে আমলকির অত্যাধিক ভূমিকা থাকে। চুলের এবং মাথার ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং এর সাথে সাথে শরীরের জন্যও আমলকি অনেক উপকারী।

আমলকি দুটি পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়। আপনি চাইলে আমলকি নিয়মিত খেতে পারেন। আবার আমলকির রস অথবা আমলকি থেকে তেল তৈরি করে মাথায় ব্যবহার করতে পারেন। দুটোই কার্যকর পদ্ধতি।

চুলের যত্নে জবা ফুলের তেল

জবা ফুলের তেল মাথায় নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল পড়া কমে যায়, ভেঙে যাওয়া চুল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এছাড়া চুলের খুশকি, চুলের শুষ্কতা কমায়  তাছারাও । চুল ঘন করে, চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে ইত্যাদি ছাড়ও জবা ফুলের তেলে  আমাদের চুলের আরো অনেক উপকার করার ক্ষমতা রয়েছে। আর যেহেতু এটি পুরোপুরি ভাবে প্রাকৃতিক একটি উপাদান তাই কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা কোন ক্ষতি হবার ভয় নেই। 

ব্যবহার পদ্ধতি - এক্ষেত্রে আপনারা ৭ থেকে ১০ টি জবা ফুল ও ৭ থেকে ১০ টি জবা ফুলের পাতা কিছু পরিমাণ নারিকেলের তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে ফুটানো তেল সংগ্রহ করুন। তারপর উক্ত তেল মাথায় নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনি উপরে বর্ণিত উপকারিতা গুলো খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।

শেষ কথা

এই আর্টিকেলে আমরা চিরতরে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এমন দশটি উপায় তুলে ধরেছি। যে উপায়গুলো আপনারা যদি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে খুব সহজে আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।  কিছু কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের কথা উপরে বলা হয়েছে যে উপাদানগুলো আমাদের চুলের জন্য খুবই উপকারী। 

আরো পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সিরাপ | এর লক্ষণ, কেন হয় ও ঘরোয়া উপায়

চিরতরে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার ১০ টি উপায় সম্পর্কে লেখা এই গুরুত্বপূর্ণ আটিকেলটি যদি আপনার কোন উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই সাপোর্ট দিয়ে আমাদের সাথে থাকবেন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন আঠিকেলে ততক্ষণ পর্যন্ত সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url