রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর ১০টি উপকারিতা

 ২০২৫ এর সময় এসে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন অনেক লোক । কিন্তু আমার যদি আমাদের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে চাই তাহলে  আমাদের কিছু খাবার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে তার মদ্ধে একটি হলো কিসমিস ।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো ‍রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর উপকারিতা এবং কিসমিস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য । 

সুচিপত্রঃ রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর উপকারিতা

কিসমিস তৈরির পদ্ধতি একটি ইন্টারেস্টিং পদ্ধতি। এজন্য অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই ধাপে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব কিসমিস তৈরির সম্পূর্ণ  পদ্ধতি চলুন শুরু করা যাক। 

আমরা সকলেই জানি আঙ্গুর ফল থেকে কিসমিস তৈরি করা হয়। কিন্তু আমরা সচরাচর যেগুলো প্রজাতির আঙ্গুর ফল খায় সেগুলো থেকেই কি কিসমিস তৈরি করা হয়?  আসলে যেগুলো প্রজাতির আঙ্গুর ফল দৈনন্দিন জীবনে আমরা সচরাচর খেয়ে থাকি সেগুলো প্রজাতির আঙ্গুর ফল থেকে যদি কিসমিস তৈরি করাও হয় তাহলে সেই কিসমিস কখনোই ভালো হবে না সেগুলো পচে যাবে না হলে কালার কালো হবে। কিসমিস তৈরি করার জন্য বিশেষ দুইটি প্রজাতির আঙ্গুর ফল ব্যবহার করা হয় ১. আরাকাবতি ও ২. সুলতানা। এই দুটি প্রজাতির আঙ্গুর ফল থেকে খুব ভালো মানের কিসমিস উৎপাদন হয়। 

কিসমিস উৎপাদন করার জন্য প্রথমে আঙ্গুর ফল উৎপাদন করতে হয়। আঙ্গুর ফল সংগ্রহ করার পর প্রথমেই পটাশিয়াম কার্বনেট ও কার্বনডিবিং অয়েল এর মাধ্যমে ধুয়ে ফেলা হয়। এর ফলে আঙ্গুর ফলে থাকা ব্যাকটেরিয়া শহ যাবতীয় ধুলাবালি রোগ জীবাণু মরে যায় তাছাড়াও শুকানোর পর কালার ভালো হয় এবং দ্রুত আঙ্গুর ফল শুকাতে সাহায্য করে। 

তারপর আঙ্গুর ফলগুলো চার থেকে পাঁচ দিন খাঁচার মধ্যে ছায়া জায়গাতে শুকানো হয়। এরপরে আবার পটাশিয়াম কার্বনেট ও কার্বনডিবিং অয়েল স্প্রে করে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করার পর আবার চার থেকে পাঁচ দিন রেখে দেওয়া হয়। তারপর শুকনা আঙ্গুর গুলোকে কিসমিস ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়। 

পরবর্তীতে কিসমিস ফ্যাক্টরিতে থাকা উন্নত জাতের মেশিনগুলো রিফাইনিং করে ভালো মতো প্রক্রিয়াজাতকরণ করে উন্নত মানের কিসমিস আমাদের উপহার দেয়। এভাবেই তৈরি হয় উন্নত জাতের কিসমিস যেগুলো আমরা সচরাচর খুবই ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে জানি।

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম

কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই তেমন জানেন না। এই ধাপে আমরা যেভাবে কিসমিস খাওয়ার পদ্ধতি আপনাদের সামনে তুলে ধরব সেভাবে যদি আপনারা সাত দিন কিসমিস খেতে পারেন তাহলে আপনাদের শরীরের যে উপকার হবে আপনারা কোনদিন ভুলতে পারবেন না। চলুন কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের অবগত করা যাক। 

আরো পড়ুনঃ হলদেটে দাঁত সাদা করার উপায়- দাতের সুস্থতা ধরে রাখতে যা করবেন

প্রথমে আপনার একটি পরিষ্কার পাত্রে আধা কেজি পরিমাণ পরিষ্কার পানি নিবেন। তারপর কিছু পরিমাণ কিসমিস (কিসমিস কেনার সময় চেষ্টা করবেন গারো কালারের কিসমিস কেনার জন্য কারণ হালকা চকচকে কালারের কিসমিস এ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর মেডিসিন ব্যবহার করা হয়) ভালোভাবে ধুয়ে সারারাত পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে উক্ত কিসমিস ভেজানো পানি খালি পেটে খেয়ে নিন। কিসমিস ভেজানো পানি খাবার পরবর্তীতে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অন্য কোন খাবার না খাওয়াই ভালো। 

ব্যাস হয়ে গেল আপনার সব থেকে উত্তম পদ্ধতিতে কিসমিস খাওয়া। এর পরবর্তীতে ভেজানো কিসমিস গুলো আপনি চাইলে খেতেও পারেন আবার না খেলেও কোন সমস্যা নেই। আশা করি আপনারা কিসমিস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছেন।

কিসমিস এ যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে

কিসমিস ছোট্ট একটি ফল। দেখতে ছোট হলেও কাজে কিন্তু মোটেও ছোট কোন ফল নয় কিসমিস। এই ছোট্ট ফলে যতগুলো পুষ্টি উপাদান রয়েছে জানলে আপনার মাথা ঘুরে পিছন দিকে চলে যাবে। 

কিসমিস থাকে পটাশিয়াম যে পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছারাও কিসমিসে ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ছারাও পর্যাপ্ত পরিমানে আয়রণ থাকার কারণে  আমাদের এনিমিয়া রোগ থেকে মুক্তি দেয় ও রক্ত স্বল্পতা দূর করে ।এছারাও কিসমিসে বিদ্যমান থাকা ভিটামিন -এ আমাদের চোখের সুস্থ্যতা নিশ্চিত করে । আমাদের শরীরের ওজন বারানোর জন্য কিসমিসে রয়েছে গ্লুকোজ এবং ফ্লুক্টোজ । 

এগুলো ছারাও কিসমিসে আমাদের হার গঠন ও শক্ত করার ক্ষমতা ও রয়েছে । কারণ কিসমিসে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের শরীরের হার গঠন ও মজবুত করতে সাহায্য করে ইত্যাদি। একবার ভাবুন ছোট্ট একটা ফল কিসমিসে এত পুষ্টি উপাদান !

কিসমিস এর উপকারিতা

কিসমিস ছোট্ট একটি ফল যার গুনাগুন দেখে অবাক হয়ে যান অনেক মানুষ। আজকের এই ধাপে আমরা কিসমিসের উপকারিতা গুলো নিয়ে আলোচনা করব। এবং দেখবো কিসমিস আমাদের শরীরের কি কি উপকার করতে ভূমিকা রাখে। 

  • একটা গবেষণায় থেকে আমাদের সামনে উঠে এসেছে এমন একটি তথ্য যা জানলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন। সে গবেষণা থেকে জানা যায় কিসমিস ভেজানো পানি খাবার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের শরীরের হজম শক্তি বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এটা মোটেও কোন সাধারণ বিষয় নয়।
  • কিসমিসে রয়েছে এমন ক্ষমতা যা আমাদের শরীরের শরীরের মেটাবলিজ বুস্ট করে।
  • কিসমিস ভেজানো পানি নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি কিডনি যা পরিষ্কার থাকে এবং কিডনিতে পাথর জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করে। 
  • যারা রক্ত দিয়ে থাকেন তাদের শরীরের রক্তে দ্রুত রিকভারি করতে কিসমিস ভেজানো পানির ভূমিকা অপরিসীম। রক্ত দানের পর দুই থেকে তিন দিন নিয়মিত কিসমিস ভেজানো পানি পান করলে রক্ত দানের ঘার্তি পূরণ হয়ে যায় 
  • এছাড়াও ফুড পয়েজেনিং বা খাদ্য বিষক্রিয়াজনিত সমস্যা প্রতিরোধ করতে কিসমিস ভেজানো পানির বিকল্প নেই। তাছাড়াও গ্যাস্ট্রিক জনিত সমস্যা দূর করতেও কিসমিস এর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 
  • কিসমিস যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে এমিনিয়া রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে যা পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা থেকেও মুক্তি দেয়। 
  • তাছাড়াও কিসমিস রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ ভিটামিন এ আমাদের চোখের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে কাজ করে। 
  • কিসমিস অনেক বেশি পরিমাণে গ্লুকোজ ও ফ্লুক্টোজ  থাকায় যাদের ওজন কম তাদের ওজন বাড়াতে এবং সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে, শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ দেশি পেয়ারার উপকারিতা - দেশি পিয়ারার ১২ টি উপকারিতা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

  • কিসমিসের মধ্যে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের হার গঠনের সাহায্য করে ও হাড় মজবুত করে এবং হারের সার্বিক সুস্থতা নিশ্চিত করে, হাড়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 
উপরে আমরা আলোচনা করেছি কিসমিসের উপকারিতা গুলো সম্পর্কে। আসলে ভাবার বিষয় ছোট্ট একটি ফল কিসমিস তার মধ্যে এত পুষ্টি উপাদান কিভাবে থাকতে পারে। আপনারা যদি স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলতে চান তাহলে প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস ধরে রাখুন ধন্যবাদ। 

রাতে কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

অনেক মানুষ কিসমিস কে শুধু রান্নার কাজে ব্যবহৃত একটি উপাদান মনে করেন। কিন্তু নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে আমাদের শরীরের যতগুলো উপকার হয় জানলে অবাক হয়ে যাবেন। আসুন কিসমিসের উপকারিতা গুলো সংক্ষেপে জেনে নেই।

  • ঘুমের সমস্যা দূর করে যাদের রাতে ঘুম কম হয় তারা নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেয়ে দেখতে পারেন। এটি অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে কার্যকর। 
  • মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে কিসমিসে থাকা পড়ুন নামের একটি উপাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • কিসমিসের রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যদি আপনার নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে এক মুঠো পরিমাণ কিসমিস খেতে পারেন তাহলে আপনাদের হাড়ের ভাঙ্গড়তা দূর হবে। 
  • প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে উচ্চ রক্তচাপ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ আসে। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিসমিস। যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত কম তাদের শরীরে ওজন বাড়ায়। এর সাথে সাথে অবাক করার মত বিষয় হলো যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেশি তাদের শরীরে ওজন কমাতেও এই ছোট্ট ফলটি কাজ করে। 
  • কিসমিস এ থাকা ফাইবার আমাদের শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পাকস্থলীর অমূলত্ব ভাব দূর করে এছাড়াও পাকস্থলী যাবতীয় সমস্যা সমাধান করতে কার্যকর। 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কিসমিস। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিছু কিসমিস খেলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। 
  • যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিসমিস। নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে ভেজানো কিসমিস খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। 
  • শুধু তাই নয় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও এই জাদুকরী ফল কাজ করে। 

কিসমিস এত গুণসম্পূর্ণ ফল যে এর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ওপরে আমরা সংক্ষেপে কিসমিসের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারলে কিসমিস খাবার অভ্যাস কখনোই ছাড়তে চাইবেন না। 

উপসংহারঃ রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর উপকারিতা

আজকের আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি খুব সুন্দরভাবে এবং সহজ পদ্ধতিতে রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর উপকারিতা এ বিষয় আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। আশা করি আপনারা সকলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। 

আরো পড়ুনঃ লিভারের হজম শক্তি কমে গেলে কি হবে | হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

রাতে ঘুমানোর আগে কিসমিস খেলে কি হয় - কিসমিস এর উপকারিতা এ বিষয়ে সুন্দর ও সহজ পদ্ধতিতে লেখা আর্টিকেলটি যদি আপনারা পড়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে সাপোর্ট দিয়ে আমাদের পাশেই থাকুন দেখা হবে পরবর্তী  কোন আর্টিকেলে ততক্ষন পর্যন্ত সুস্থ থকুন ভালো থাকুন আল্লাহাফেজ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আড্ডাভিউ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url